ইসরায়েলের সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালালো হুথি
স্নায়ুচাপের বিস্ফোরণমুখর এই অঞ্চলে প্রতিদিন নতুন নাটকের মতো সামনে আসছে যুদ্ধের একেকটি দৃশ্য। ইয়েমেনের হুথি গোষ্ঠী আনসারুল্লাহ সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে একাধিক বিশেষ সামরিক অভিযান পরিচালনার। গাজার চলমান সংকটকে কেন্দ্র করে এবার তারা ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরের কাছে একটি সামরিক স্থাপনায় ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।
হুথি সামরিক মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারী জানান, “জুলফিকার” নামের একটি শক্তিশালী ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের দিকে ছোঁড়া হয়েছে। এই হামলাকে তিনি ফিলিস্তিনি জনগণের বিজয় হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
শুধু ইসরায়েল নয়, হুথিরা আরও দাবি করেছে যে, তারা মার্কিন দুটি বিমানবাহী রণতরী — ইউএসএস হ্যারি এস ট্রুম্যান এবং ইউএসএস কার্ল ভিনসন — ও তাদের সঙ্গে থাকা যুদ্ধজাহাজগুলোর ওপর যৌথ ড্রোন ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এই প্রথমবারের মতো ইউএসএস কার্ল ভিনসনকে তারা লক্ষ্যবস্তু করেছে বলেও জানান তারা।
হুথিদের দাবি অনুযায়ী, তারা ইয়েমেন আকাশে উড়ন্ত একটি এমকিউ-৯ রিপার ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছে, যা গত তিন সপ্তাহে তাদের ভূপাতিত করা পঞ্চম ড্রোন।
এই সব হামলা, হুথি গোষ্ঠীর ভাষায়, “পবিত্র জিহাদ” অভিযানের অংশ এবং গাজায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের পাশে থাকার অঙ্গীকার হিসেবে চালানো হয়েছে।
তবে এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া দ্রুতই আসে। শুক্রবার সকালে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, ইয়েমেন থেকে ছোঁড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র তারা সফলভাবে আকাশেই ধ্বংস করেছে। তেলআবিবসহ আশপাশের এলাকায় বিমান হামলার সতর্কতা জারি করা হয় এবং জনগণকে ১০ মিনিটের জন্য আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়।
এই উত্তেজনা আরও তীব্র হয় যখন একইদিন মার্কিন বাহিনী পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানায়। ইয়েমেনের রাজধানী সানা ও রস ইশা বন্দরে হুথি-নিয়ন্ত্রিত জ্বালানি গুদামে চালানো এক বিমান হামলায় অন্তত ৭৪ জন নিহত হয়। নিহতদের মধ্যে কয়েকজন হুথি যোদ্ধা ছিলেন বলে জানায় হুথি-সমর্থিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
এই হামলাকে গত এক মাসের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী মার্কিন প্রতিক্রিয়া হিসেবে মনে করা হচ্ছে। সানার আকাশে বোমার গর্জন, জ্বালানি স্থাপনায় আগুন এবং হতাহতের কান্না যেন নতুন করে যুদ্ধের বিভীষিকা সামনে আনছে।
হুথিদের বার্তা স্পষ্ট— যতক্ষণ গাজায় ইসরায়েলি হামলা বন্ধ না হচ্ছে এবং অবরোধ তুলে না নেওয়া হচ্ছে, ততক্ষণ তারা প্রতিরোধ চালিয়ে যাবে। পাশাপাশি তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছে, যদি মার্কিন সামরিক তৎপরতা বাড়ে, তাহলে তাদের পাল্টা প্রতিক্রিয়া হবে আরও তীব্র ও ব্যাপক।
বর্তমানে এই সংঘাত আর শুধু গাজার গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নেই। এটি ছড়িয়ে পড়েছে আরব উপদ্বীপ, লোহিত সাগর ও পারস্য উপসাগর পর্যন্ত। এই বিস্তৃত যুদ্ধ আর কারো জন্যই দূরের আগুন নয়।